না-বলা কথা বলার শ্রেষ্ঠ সময় বর্ষা

এখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর পৌনে বারোটা।
শুক্রবার, ২ আষাঢ়—১৪২৪; ১৬ জুন—২০১৭ সাল।
বাইরে এখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি, আমার কানে সে শব্দ;
জানালার শার্সিতে ফোঁটা-ফোঁটা বৃষ্টির পানি,
জানালার স্বচ্ছ কাঁচ এখন ঝাপসা—ধোঁয়াটে;
আমার চোখ দুটিও জানালার মতো, অন্ধকার।
এরকমই হয়—বৃষ্টি হলেই দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়—
ইচ্ছেগুলো লোপ পায়, কানে অযাচিত শব্দ ভেসে আসে—
তখন শৈশব ডাকে আয়, কৈশোর ডাকে আয়,
যৌবন ভর্ৎসনা করে, বার্ধক্য জেঁকে বসে খুব!
 
এবারের বর্ষা খুব বিষণ্ন।
কেমন নিষ্ঠুর ঘাতকের মতো! দুদিন আগে প্রবল বৃষ্টিতে
পাহাড় ধসে প্রাণ গেছে ১৪০ আদমের!
প্রতিদিনই বজ্রপাতে মারা যাচ্ছে মানুষ;
সুনামগঞ্জে ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে।
এবার খাদ্যঘাটতির বাংলাদেশ!
দু-লাখ টন চাল আমদানী করছে সরকার!
 
এবার ঈদের বাজারও মন্দা বেশ, ঈদ নিয়েও উৎকণ্ঠিত
শিশু-কিশোর, যৌবনবতীরা। নতুন পোশাক নিয়ে
ভাবনায় পড়ে গেছে সবাই।
এসবের মধ্যেও বর্ষায় কদম ফুটেছে শহরে—গ্রামে।
নাগকেশর, নাগলিঙ্গমের উৎসব চলছে খুব,
কাঁঠালিচাপায় ভরে আছে বাতাস…।
 
তবুও এই বর্ষায় প্রতিদিন ভিজে যেতে ইচ্ছে হয়,
পুরোনো কথাগুলো নতুন করে বলার ইচ্ছে জাগে,
যে যাই বলুক, বর্ষা ঠিক বর্ষার মতোই—
বিষণ্ন, নিষ্ঠুর, না-বলা কথা বলার শ্রেষ্ঠ সময়।

 

কবি নাসির আহমেদ কাবুল

জন্ম : পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার ব্যাংকপাড়ায়, ৬ জানুয়ারি, ১৯৬০ প্রকাশক ও সম্পাদক, জলছবি প্রকাশন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক : www.ajagami24.com তালিকাভুক্ত গীতিকার, বাংলাদেশ বেতার প্রকাশিত গ্রন্ত একুশটি। ফেসবুক আইডি-facebook.com/NasirAhmedKabul ফোন : ০১৮১৭১২৭৮০৭, ০১৯১৫৬৮৪৪৩৪ ইমেইল : jalchhabi2015@gmail.com
সকল পোস্ট : নাসির আহমেদ কাবুল

১১ thoughts on “না-বলা কথা বলার শ্রেষ্ঠ সময় বর্ষা

  1. এক কাব্যে জীবন , দেশ বর্তমান পরিস্থিতি সবই ব্যক্ত করেছেন সুনিপুণভাবে। বর্ষা হাস্যরসে চেয়েও দুঃখ যাতনায় বেশি অনুভুত।

    অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

  2. তবুও এই বর্ষায় প্রতিদিন ভিজে যেতে ইচ্ছে হয়,
    পুরোনো কথাগুলো নতুন করে বলার ইচ্ছে জাগে,
    যে যাই বলুক, বর্ষা ঠিক বর্ষার মতোই—
    বিষণ্ন, নিষ্ঠুর, না-বলা কথা বলার শ্রেষ্ঠ সময়।
    কথাগুলো একজন প্রকৃত কবির মনের কথা!
    এই না বলা কথাগুলোর অনেকাংশ লেখাটিতে অন্তরীণ! কেবল পাঠকের খুঁজে নেবার পালা।লেখাটা চমৎকার তাতে সন্দেহ নেই তবে নাসির আহমেদ কাবুল দাদার আবেশিত একটি লেখার মানে ভিন্ন মাত্রায় মন ভরে যাবার কথা! অনেক আবেগ অনেক আহ্লাদ থাকার কথা! আমার কাছে মনে হলো দাদা সময়ের কার্পণ্য করেছেন।

  3. তবুও এই বর্ষায় প্রতিদিন ভিজে যেতে ইচ্ছে হয়,
    পুরোনো কথাগুলো নতুন করে বলার ইচ্ছে জাগে,
    যে যাই বলুক, বর্ষা ঠিক বর্ষার মতোই—

    এটাই চিরন্তন।

  4. দাদা, বর্ষার আনন্দ বলেন কিবা দুর্ভোগ…তবে লকডাউনের বেদনা সীমার মাঝে অসীম, ওটা নিয়ে একটি কবিতা চাই-ই চাই…এটা দারুণ…

  5. একটি জীবনের মাঝে বাস করে অনেকগুলো জীবন!
    পরতে পরতে তার বিচিত্র অনুভূতি!
    অথচ “বর্ষা ঠিক বর্ষার মতই।”

    খুব বেশি ভালো লেগেছে কবিতাটি।

    কবির জন থাকলো শুভকামনা।

মন্তব্য করুন