লেখালিখি নিয়ে দু’চার কথা

নাসির আহমেদ কাবুল

বড় লেখকেরা লেখালেখি বিষয়ে অনেক পরামর্শ দেন। সেগুলো কেমন, তা দেখার জন্য একটু চোখ বুলাই স্টিভেন কিংয়ের দিকে। তাঁর বই মানুষ পড়ে, তাই তাঁর কথাগুলোও হয়তো পড়বে মানুষ।
১৯৪৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন স্টিভেন কিং। মূলত ভৌতিক, অলৌকিক, নাটকীয়, কল্পকাহিনী ধরনের লেখায় তিনি সিদ্ধহস্ত।
তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা ৫০টির বেশি, ছোট গল্প দুই শতাধিক। তাঁর ৩৫ কোটি বই বিক্রি হয়েছে।
তাঁর পরামর্শগুলো দেখি তাহলে

১. বেশি বেশি পড়ুন
আপনি যদি লেখক হতে চান, তাহলে দুটো জিনিস আপনাকে করতে হবে। একটা হলো অনেক অনেক পড়তে হবে এবং অনেক অনেক লিখতে হবে।
বেশি পড়লে নতুন নতুন শব্দ শেখা হয়ে যায়। বাকভঙ্গী সম্পর্কে ভালো ধারণা জন্মে।

২. প্রতিদিন লিখতে হবে, তবে ক্লান্তি নিয়ে নয়
প্রতিদিন সকালে স্টিভেন কিং লেখেন। দুপুরে চিঠিপত্র নিয়ে বসেন এবং ঘুমান, সন্ধ্যায় পড়েন, এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। টিভি দেখেন, ভিডিও গেম খেলেন। সময়টা নিজের মতো করে ঠিকঠাক করে নেন তিনি।

৩. শুধু সাহিত্য নিয়ে থাকলে হবে না, অন্য কাজও করতে হবে
লিখে সবাই স্টিভেন কিং হন না যে ইচ্ছে হলেই টাকা–পয়সার স্রোতে ভেসে যাবেন। তাই, টিকে থাকার মতো আয় থাকতে হবে মানুষের। যদি কেউ স্টিভেন কিংয়ের মতো লিখেই স্বচ্ছল হয়ে যান, তাহলে তখন তিনি শুধু লেখালিখি নিয়েই থাকতে পারবেন। অন্য কাজ নিয়ে না ভাবলেও চলবে।

৪. অসফল হলে ভেঙে পড়ার কিছু নেই, ওটা সাহিত্যিক পথ গড়ে তোলার সোপান
অন্য মানুষের সাফল্য দেখে অনেকেই মনে করেন, তিনি নিজেও সে রকম জনপ্রিয়তা পেয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তব ততোটা কাব্যিক কিছু নয়। সাফল্য লাভ না করলে তা হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো যেন না হয়। নিজের পরিশ্রমে, চর্চায় এবং মেধায় ঠিকই একদিন পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

৫. আপনাকে অনুপ্রেরণা দেবে, এমন একটি দল হোক আপনার
লেখকদের অনেকে নিজ বাড়ি থেকেই লেখালেখির অনুপ্রেরণা পান না। অথচ স্টিভেন কিংয়ের জীবনে উৎসাহ নিয়ে হাজির হয়েছেন তাঁরই স্ত্রী। স্ত্রী সবসময় বলতেন, তোমাকে দিয়ে হবে। যদি সত্যিই আপনার লেখালেখিতে সাফল্য আসবে বলে বিশ্বাস করে কেউ, তাহলে আপনার পক্ষে অসফল হওয়া কঠিন।

৬. লেখার সময় স্মার্ট ফোন আর টেলিভিশনকে দূরে রাখুন
যে সকল জিনিস আপনার মনোযোগ নষ্ট করে, সেগুলো লেখার সময় হাতের কাছে রাখবেন না। এমনকি জানালা দিয়ে যদি মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায, যা দেখে আপনি বিমোহিত হয়ে পড়তে পারেন, তবে তা থেকেও নিজে দূরে থাকুন। বন্ধ করে দিন সে সময় জানালা। নবীন লেখকের জন্য এটা মেনে চলা খুব দরকার। বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে আপনি অনেককিছুই মানিয়ে নিতে পারবেন।

৭. সৃস্টিশীলতার জন্য একটা জায়গা হোক আপনার
আপনার লেখালেখির চেয়ারটা হোক আপনার পছন্দের। টেবিলটাও। ল্যাপটপে লিখলে, সেটাও। কাগজে–কলমে লিখলে কী ধরনের কাগজ বা কী ধরনের কলম আপনার দরকার তাও হোক আপনার পছন্দমতো। বড় পয়সাওয়ালা লেখক হয়ে গেলে লেখালেখি করার জন্য একটা বাড়িই কিনে ফেলুন না হয়, যেখানে থাকবে সবকিছু আপনার পছন্দমতো।

৮. যা জানেন, লিখুন সেটাই
আ আপনার জানা আছে, সেটা নিয়েই আপনি লিখতে পারেন সহজে। বিষয়টি আপনার দখলে থাকে। জানার ব্যাপারটা শুধু হাতে–কলমের ব্যাপার নয়। আপনার হৃদয়ও তাতে অংশগ্রহণ করে। লিখতে লিখতে একসময় দেখবেন এমনিতেই আপনার হৃদয় থেকে কথা বেরিয়ে আসছে।

৯. লিখুন একা একা, শেষ হলে ছড়িয়ে দিন লেখা
লেখার সময় সব মনোযোগ থাকবে লেখার ওপর। অনেকটা এ রকম, প্রতিটি অধ্যায় লিখছেন এমনভাবে যেন দেখছেন একটা গাছকে। পুরো লেখা হয়ে গেলে একটু পিছনে গিয়ে দাঁড়ান। এবার একটি গাছ নয়, দেখতে পাবেন পুরো বনটাকেই। লেখার পর এমন কয়েকজনকে পড়তে দিন, যারা ভালো পাঠক। তারা তাদের মতো করে কিছু হয়তো ঠিকঠাক করতে বলবে। আপনি দেখবেন, তারা যা বলছে, একদম ঠিক। লিখবার সময় সেটা মনে ছিল না। এবার ঠিকঠাক করে ছাপতে দিন।

১০. ভালো লিখতে চান? আরো পড়াশোনা করুন
নিজের লেখা আরো ভালো করার জন্য আরো বেশি পড়ুন। পড়তে থাকুন। তারপর আবার বসুন লেখার জন্য।

কবি প্রশাসক

সকল পোস্ট : প্রশাসক

মন্তব্য করুন