রৌদ্রজ্বলা করোটি/শীলা প্রামাণিক

কবিতা সাহিত্যের প্রাণ এবং সুন্দরের প্রকাশ। কবিতা শিল্পের মহোত্তম শাখা হিসেবেও পরিগণিত। কবিতার মধ্যে শিল্প ও সাহিত্যের যে অমিয়-সুধা বিদ্যমান সেই রস আস্বাদনের নেশায়, ভালোবাসায় কবিতার সাথে আমার বিচরণ, আমার ছুটে চলা। কবিতার সাথে আমার অনন্ত যোগ, আমার সখ্য, আমার পথ চলা। হাজার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আর্তনাদ ফুটে উঠেছে ‘রৌদ্রজ্বলা করোটিতে।’ কাব্যগ্রন্থটিতে কখনো প্রেম, বিরহ, কখনো স্নিগ্ধতা, কখনো তেজোময়, কখনো দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, উদাসীনতা একাকীত্ববোধ, উচ্ছ¡াস, কখনো হৃদয়ের টলমল জলে ভেসে যায় জীবনের পারাবার। ‘রৌদ্রজ্বলা করোটিতে’ যেমন সময়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তেমনি কবিতাগুলো সময়ের অক্ষরস্রোতে ভেসে উঠেছে একটি জলপদ্মের পাপড়ি মেলে। পৃথিবীর তাবৎ রূপ-রস, গন্ধের স্পর্শ ‘রৌদ্রজ্জ্বলা করোটিতে’ স্পষ্ট করবার চেষ্টা করেছি। কাব্যগ্রন্থটিতে প্রায় ৬৩টি কবিতা স্থান পেয়েছে। কবিতাগুলো যদি পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারে তবে গ্রন্থটি সার্থক হয়েছে মনে করব।
—শীলা প্রামাণিক

উভয় পৃষ্ঠার চিত্রাংকন/ইফতেখারুল আলম

জীবনবোধের অন্তরঙ্গতা ইফতেখারুল আলমের
কবিতার সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। তাই তো
তার দ্বিধাহীন উচ্চারণ-
‘নদীর কাছে মানুষের যেটুকু ঋণ
পরিশোধ হয় না সাত জন্মের সুদে
সুদ দিতে দিতে আজম্মের ক্রীতদাস
নদী চৌহদ্দির বাহিরে যেতে পারেনি।’

আনন্দলোক/আজমেরিনা শাহানী

পৃথিবীর হিম গহŸর থেকে নেমে আসা এই অনন্ত ভোরÑএই হাওয়ার তোড়ে ভেসে আসা কুয়াশার নিগূঢ় ছল, নিয়মহীন এই প্রশ্নের শহরের নিভে যাওয়া সব আলোর হারানো মুহূর্ত উৎসবÑমুদ্রাহীন যত উদ্ধত ফাগুনবেলাÑনিলাম হয়ে যাওয়া চৈতালি সুখ, পাখি জীবনের ব্যথিত বিকেল, চোখের পাতায় ডোবা লাল সূর্য, সোনালি চিলের ধ্রæপদী তৃষ্ণা, ঠোঁটের কিনারে জমে থাকা বিবশ মৃত্যু নদী…সবই নৈঃশব্দের মন্ত্র পড়ে এক কোটি বছর হয়ে হারিয়ে গেছে নির্বাণের পথে!
নিরুপম নশ্বরতার এই পৃথিবীতে আমি শুধু ধ্বংস ও দীনতাগুলোকে ছুঁয়ে দিতে চেয়েছি, জীর্ণতা ও মৃত্যুগুলোকে ছুঁয়ে দিতে চেয়েছিÑওরা ফুটুক কোন বসন্ত বিকেল হয়ে…!

কবি কি নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন, স্বজনহারা? এ কারণেই কি কবির বুক জুড়ে হাহাকার তীব্রতর হয় দিনে দিনে? কাছে পাওয়ার বুভুক্ষু বাসনা দিনরাত তাড়িয়ে বেড়ায় কবিকে? প্রত্যেক কবির মধ্যে এই দিকটি চিরন্তন। তারপরও প্রত্যেকেই স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। প্রত্যেকের আলাদা-আলাদা আকুতিতে কবিতার দালান নির্মিত হয়। কবির ভালোবাসা পাঠকের চেতনায় মোমের মতো গলে গলে পড়ে প্রতিনিয়তÑকখনও কবিতা, কখনও গানে এবং কখনও সুরের মোহজালে। কবিতা পাঠকের হৃদয় পুড়িয়ে দেয়- পাঠক বিভ্রান্ত হন; আবার জেগেও ওঠেন। কবির দয়িতা এবং কবি দুজনেরই আকুতি মিলনে। তবুও তারা নদীর দুই তীরের মতো বয়ে চলে অনাদি-অনন্ত। সুন্দরের মোহে উৎকণ্ঠিত কবি সঞ্জয় মুখার্জ্জীর চিরন্তন বাসনায় জন্ম নিয়েছে ‘আরশিতে তুমি’ কাব্যগ্রন্থ। কবিতার ছলে কী অসাধারণ রঙের পরশ বুলিয়ে যান তিনি, কী অদ্ভূত বাক্যবাণে তীরবিদ্ধ করেন পাঠককে!- এই কাব্যগ্রন্থ না পড়লে তা উদ্ঘাটন করা সহজ হবে না কখনই। ভালোবাসার এই কাব্যটির মাধ্যমে সঞ্জয় মুখার্জ্জী পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন পাতবেন, সে কামনা আমারও।
-নাসির আহমেদ কাবুল
কবি, গীতিকার ও কথা সাহিত্যিক

‘‘লেখক তার বই সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে পরিচিতজনেরাও। ক্যামেরা নিয়ে ছুটোছুটি করছেন অনেকেই। একজন উপস্থাপকের ভূমিকায় বলে যাচ্ছেন লেখক কী করেছেন, এই বই লিখতে গিয়ে তিনি কী ভেবেছেন? পাঠক এই বই পড়ে কী বেনেফিট পাবে, এইসব। একইসাথে মঞ্চে পাশাপাশি তিনটি জটলা। মিডিয়া ব্যক্তিত্বও আছেন। তারা হাসি-হাসি মুখে মাইক্রোফোনের সামনে নতুন লেখক সম্পর্কে বলে চলেছেন। লক্ষ্যণীয় এটাই, কেউই কিন্তু কারো কথা শুনছেন না! এবারের বইমেলায় ঠাসাঠাসি গাদাগাদি যদিও একটু কম, তারপরও পায়ে পায়ে লোকজনের আনাগোণা।’’ – লেখক সঞ্জয় মুখার্জ্জীর এই হলো গল্প বলার ধরন। গল্পের চরিত্রগুলোর জীবনে অতি সাধারণ বা কখনো কখনো অসাধারণ ঘটনাগুলোকে সহজ বাক্য এবং সঠিক শব্দ চয়নে গ্রন্থভূক্ত করতে লেখক সঞ্জয় মুখাজ্জীর মুন্সিয়ানা লক্ষ্য করা যায়। আর এ কারণে পাঠকও মিশে যান গল্পের পরিমÐলে। নিজের অজান্তেই পাঠকও হয়ে ওঠেন কাহিনির একজন। বইটি পাঠক গ্রহণ করবেন বলে আশা করি।
-প্রকাশক

বাংলানামের দেশ/সঞ্জয় মুখার্জী

কবি ও গীতিকার সঞ্জয় মুখার্জ্জী তার ‘বাংলা নামের দেশ’ বইটিতে বাংলা নামের দেশটির জন্মইতিহাস তথা আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন ছন্দে ছন্দে। শিশু-কিশোরদের গদ্য পড়ার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতে তিনি এই অভিনব পন্থায় ইতিহাসের মতো একটি বিরক্তিজনক বিষয়কে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমাদের অর্জনগুলো জানানো আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করতে লেখক তার প্রচেষ্টায় সার্থক বলে মনে করছি। আশা করছি বইটি পাঠক মহলে সমাদৃত হবে।

কৈশোর থেকে যৌবন পর্যন্ত তিন-তিনটা মৃত্যু দেখে নিলা। খুব কাছের তিনজন মানুষের মৃত্যু ওর স্বাভাবিক বিকাশের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যৌবনের ডাক অস্বীকার করতে পারে না সে। নিলার জীবনেও আসে প্রেম, স্বপ্ন, ভালোবেসে ঘরবাঁধার হাতছানি। কৈশোরে নজর কেড়ে নেওয়া যুবক আরিফের সাথে ধীরে-ধীরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। নিলা-আরিফের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব একসময় আত্মপ্রকাশ করে ওদের প্রথম প্রেম হিসেবে। একে অপরের ভালোবাসার মানুষ হয়ে ওঠে ওরা। ওদের প্রণয়ের পরিণতিতে বাঁধা হয় আরিফের অতীত। সব বাঁধা পেরিয়ে প্রিয়জন আরিফের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূরণে এগোয় নিলা। কিন্তু এক পা এগোতেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায় নিলার সব স্বপ্ন। জীবন থেকে হারায় ভালোবাসার মানুষ, হারায় ভালোবাসা। আবারো ওকে মেনে নিতে হয় নিষ্ঠুর ভাগ্য। বার বার ভাগ্যের সাথে সমঝোতা করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে নিলা। ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে নিজের ভাগ্য নিজেই গড়তে চায় সে। জীবনের বিশেষ একপ্রান্তে এসে শুধু নিজের স্বার্থের কথাই ভাবে সে। স্বার্থপর হয় এবং নিজের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। ওর সেই সিদ্ধান্তের বলি হয় শাহেদ। অচিরেই ভুল ভাঙে নিলার। বুঝতে পারে অন্যায় হয়েছে শাহেদের সাথে। উপলব্ধি করতে পারে শাহেদ ওর জীবনের প্রয়োজন এবং প্রিয়জন দুটোই। নিলা এখন জীবনের এমন এক দ্বারপ্রান্তে যেখানে শাহেদের একটি সিদ্ধান্ত নিলাকে রক্ষা করতে পারে, নতুন জীবনের বরদান করতে পারে। অথবা ছুঁড়ে ফেলতে পারে চিরতরে।

ক্যালকুলাস ১
তোমাকে মানতেই হবে যে অন্ধের কাছে চাঁদের আলোর কোনো মূল্য নেই। মাতালের কাছে বিশ্বসুন্দরীর কোনো দাম নেই। ফুচকাওয়ালার কাছে থিসিস পেপারের কোনো দাম নেই। চোরের কাছে নীতিকথার দাম নেই। বখিলের কাছে বৃহতের দাম নেই। নেকড়ের কাছে হরিণের দাম নেই আর আমলার কাছে কামলার কোনো দাম নেই।
এই যে দাম নেই… তার মানে কিন্তু সেগুলো মোটেই মানহীন নয়। বরং মানের দিক থেকে সেগুলো অধিক মূল্যবান এবং দামের দিক থেকে দুর্মূল্যও বটে।
কোথাও অবমূল্যায়ন হলে, অসম্মান হলে নিজেকে কক্ষনো গর্দভ ভাববে না। মাথায় রেখো তুমি তুচ্ছ নও! ফেলনা নও, অপদার্থ নও! নিশ্চয়ই উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আপন তেজে তুমিও জ্বলে উঠতে পারো মুহূর্তে! তুমিও ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে পারো! আজ যে অপশক্তি তোমাকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে কাল পরাশক্তি হয়ে তুমিও দেখিয়ে দিতে পারো তুমি সাধারণ নও! তুমিও অলঙ্ঘনীয়, দুর্মর!
টমাস আলভা এডিসনকে তার শিক্ষকরা মেন্টালি ‘রিটার্ডেড’ আখ্যা দিয়েছিলেন। অথচ পৃথিবী প্রমাণ করে দিয়েছিল মেন্টালি রিটার্ডেড মূলত এডিসন ছিলেন না, ছিলেন তার স্বনামধন্য শিক্ষকরা; যাঁরা তাঁদের চর্মচক্ষু দিয়ে ‘ফিউচার ডায়মন্ড’-কে চিনতে পারেননি।
তুমি হীরে হলে…একমাত্র রতœ ব্যবসায়ীই তোমার সঠিক দাম নির্ধারণ করতে পারে; কয়লা ব্যবসায়ীর কি সাধ্য আছে তোমাকে চিনতে পারার?
সাধারণ মানুষ মৌমাছির হুলের খবর রাখে। মধুর খবর তো মৌয়ালরাই রাখে, তাই-না?