বই প্রকাশে আপনার ভাবনা, আমাদের উত্তর

একজন নতুন লেখক ই-মেইলে বার্তা দিয়ে বলেছেন, “মহোদয়, আমি আপনাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় তিনফর্মার একটা ছোটগল্পের বই প্রকাশে আগ্রহী। এর আগে যেহেতু কখনো বই লেখা হয়নি, তাই প্রকাশপদ্ধতি সম্পর্কে আমার ধারণা খুব কম। সেক্ষেত্রে আপনাদের ওয়েবসাইট দেখে যতটা জেনেছি, বই প্রকাশের জন্য প্রথমে পাণ্ডুলিপি পাঠাতে হয়। এক্ষেত্রে আমি কি আমার বইয়ের পাণ্ডুলিপি আপনাদের কাছে এখন পাঠাতে পারি?”—বিনীত ভুক্তভোগী।
—এ সমস্যাটা শুধু তার একার নয়, অনেকেরই। যারা প্রথমবার বই প্রকাশ করতে চাচ্ছেন, তাদের অজ্ঞতার কারণে প্রায় প্রতিদিন ফোনে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে হয়। আজ এই লেখাটির মাধ্যমে বই প্রকাশ করতে আগ্রহীদের অনেক প্রশ্নের উত্তর এখানে দিতে চেষ্টা করব। আশা করব, আপনারা উপকৃত হবেন।
প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে যে, বই প্রকাশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা। এতে লাভ-লসের হিসাব করতে হয়। একটি বইয়ের অন্তত দুইশত কপি বিক্রি না হলে ছাপার খরচ উঠে আসবে না। এ জন্য প্রকাশকরা নতুন লেখকদের বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের খরচে ছাপতে একেবারেই সম্মত হবেন না। তাহলে কী করতে হবে নতুন লেখককে? সহজ উত্তর, প্রকাশনা খরচ লেখক বহন করলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বইটি প্রকাশ করে দেবে।
প্রশ্ন : কত টাকা খরচ হতে পারে একটি বই প্রকাশ করতে?
উত্তর : একটি বই প্রকাশ করতে কত টাকা খরচ হবে, জানতে হলে আপনাকে বলতে হবে আপনার বইটি কত পৃষ্ঠার হ‌বে এবং আপনি কতগুলি বই ছাপতে চান। এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, বইয়ের আকার ফরমা হিসেবে গননা করা হয়। ১৬ পৃষ্ঠায় এক ফরমা (এক পাতা নয়-এক পাতায় দুই পৃষ্ঠা)। এখন আপনি ৪ ফরমার অর্থাৎ ৪x১৬= ৬৪ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করতে চান। অথবা ৫ ফর্মা বা ৫x১৬= ৮০ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ কর‌তে আগ্রহী। এভাবে ৬ ফর্মা ৯৬ পৃষ্ঠা, ৭ ফর্মা ১১২ পৃষ্ঠা অথবা তারও অধিক আপনিই হিসাব করতে পারবেন। এরপর আপনাকে বলতে হবে কতগুলি বই ছাপতে চান। এবার প্রকাশকের প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলতে পারবেন ৫ ফরমার ২০০ কপি বই আপনি ছাপতে চান। এই তথ্যটুকু পেলেই প্রকাশক বইটি ছাপতে কত টাকা খরচ হবে আপনাকে বলতে পারবেন।
প্রশ্ন : কীভাবে পাণ্ডুলিপি পাঠাতে হবে?
উত্তর : সুতন্বী হলে ভালো হয়, না হলেও যে কোনো বাংলা ফন্টে পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের ইমেইলে পাঠাতে পারবেন।
প্রশ্ন : কভার কে করে দেবেন?
উত্তর : সে দায়িত্ব প্রকাশকের। কভার আর্টিস্ট এই কাজটি করেন। কভার আঁকার কাজ‌টি জ‌টিল এবং এ‌টি শিক্ষান‌বিশ‌দের দি‌য়ে এ‌কেবা‌রেই সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : আইএসবিএন কী? কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর : ISBN (International Standerd Book Number) প্রতিটি বইয়ে ১৩ ডিজিটের একটি নম্বর থাকতে হবে। না থাকলে বইটি প্রকাশ অর্থহীন। কারণ এই নম্বর না থাকলে জাতীয় সংগ্রহশালায় বইটি সংরক্ষিত হবে না এবং বাংলাদেশের বাজারে বইটি বৈধভাবে বিক্রি হবে না। এই নম্বরটি সংস্কৃ‌তি মন্ত্রণাল‌য়ের অধীন কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার থেকে টাকার বিনিময়ে প্রকাশকরা সংগ্রহ করে থাকেন। এ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।
প্রশ্ন : বইয়ের মূল্য কত হবে?
উত্তর : সে হিসাবটা আপনি নন, প্রকাশক প্রচলিত রীতিতে ঠিক করবেন। বই প্রকাশনা খরচ বাড়‌লে বই‌য়ের মূল‌্যও বা‌ড়ে। তবে ফরমা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
প্রশ্ন : বইয়ের বাজারজাতকরণের দায়িত্ব কার?
উত্তর : নিশ্চয়ই প্রকাশকের। সে লক্ষে প্রকাশক বইটি পাঠকের কাছে সহজলভ্য করার বিষয়টি নিশ্চিত করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবেন না। কারণ পাঠক বই কিনবেন, না কি কিনবেন না–সেটা প্রকাশক জানেন না। তবে নতুন লেখকদের তার খরচের টাকাটা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য নিজ্স্ব পরিমণ্ডলে যেমন: আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে বইটি বিক্রি করতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। প্রতি বছর বইমেলায় লক্ষ্য করা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও নিজের টাকায় বই প্রকাশ করে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করছেন। নিজের কাজ নিজে করা গৌরবের, লজ্জার নয়।
প্রশ্ন : ভালো প্রকাশক কীভাবে নির্বাচন করা হবে?
উত্তর : এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আপনার বইটি প্রকাশ করতে হলে একটি ভালোমানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও ভালো একজন প্রকাশক/সম্পাদক খুঁজে বের করতে হবে আপনাকে। বাজারে যেসব প্রতিষ্ঠানের সুনাম আছে, বইমেলায় যাদের স্টল থাকে তাদেরকে আপনার বইটি প্রকাশের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত হতে পরেন। একটা অপ্রিয় সত্য কথা বলতেই হয়, অনেকগুলো টাকা খরচ করে সামান্য কিছু টাকার জন্য অখ্যাত কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনার পাণ্ডুলিপি দিয়ে প্রতারণার শিকার হবেন না।
এ ছাড়াও আর কোনো বিষয় জানতে আগ্রহী হলে ফোন করতে পারেন।
প্রশ্ন : সম্পাদনা বিষয়টি কী?
উত্তর : সম্পাদনা অর্থ পাণ্ডুলিপির সংশোধন বুঝায়। লেখকরা যে ভুলগুলো করেন, একজন দক্ষ সম্পাদক সে ভুলগুলো সংশোধন করে দেন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রশ্ন : প্রুফ রিডিং কী?
প্রুফ রিডিং বলতে বানান সংশোধন বুঝানো হয়ে থাকে। তবে এখন সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিং একসঙ্গে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : জলছবি প্রকাশন কি পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করে বই প্রকাশ করে?
উত্তর : অবশ্যই। জলছবি প্রকাশন সম্পাদনা ব্যতীত কোনো পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করে না।
প্রশ্ন  : জলছবি প্রকাশন কি সারাবছর বই প্রকাশ করে থাকে?
উত্তর : জি। জলছবি প্রকাশন বছরব্যাপী বই প্রকাশ করে থাকে।
প্রশ্ন : জলছবি প্রকাশনের কি বাংলা একাডেমির মেলায় স্টল থাকে?
উত্তর : জি। প্রতিবছর সোহরাওযার্দী উদ্যানে একুশে বইমেলায় জলছবি প্রকাশনের স্টল থাকে।
প্রশ্ন : বই প্রকাশ করতে হলে কতদিন আগে পাণ্ডুলিপি পাঠাতে হবে?
উত্তর : অন্তত ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধে্য পাণ্ডুলিপি পাঠাতে হবে।
প্রশ্ন : বইমেলায় প্র্রকাশের জন্য কবে নাগাদ পাণ্ডুলিপি পাঠানো যায়?
উত্তর : ডিসেম্বর পর্যন্ত পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করা হয়। তবে জরুরিভিত্তিতে জানুয়ারিতেও  শর্তমূলকভাবে পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করা হয়।
নাসির আহমেদ কাবুল
প্রকাশক ও সম্পাদক, জলছবি প্রকাশন
০১৮১৭১২৭৮০৭ (নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ)

কবি প্রশাসক

সকল পোস্ট : প্রশাসক

মন্তব্য করুন