স্ফটিক বাড়ি ও অন্যান্য গল্প

 

স্ফটিক বাড়ি ও অন্যান্য গল্প
লেখক : এশরার লতিফ
মুল্য : ৩০০ টাকা


একটুখানি পড়ুন

হাসপাতালের একটা গন্ধ আছে, স্যাভলন আর ফিনাইল মেশানো। গন্ধটা নাকে এলেই আমার নিঃশ্বাস আটকে আসে, গা গুলিয়ে যায়। বুকের ওপর মৃত্যুর একটা বিরাট ভার অনুভব করি। আমি বিয়েতে যাই, জন্মদিনে যাই, আকিকায় যাই, এমন কি মুসলমানিতেও। কিন্তু হাসপাতালে না। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন দিনরাত প্রচুর ভাত আর প্রক্রিয়াজাত গরু-মহিষ গলাধঃকরণ করে হয় হৃদরোগ নতুবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কেউ রক্ত-শর্করাজনিত ঘা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, কেউ হৃদযন্ত্রের ভাল্ব আটকে সিসিইউতে মটকা মেরে পড়ে থাকে। আমি খবর পাই কিন্তু দেখতে যাই না। এরা ক্ষুব্ধ হয়। আড়ালে-আবডালে ‘বেয়াদব-বেয়াড়া’ জামাইকে নিয়ে অনেক কথা বলে। বিয়েতে, জন্মদিনে, আকিকায় ‘দুধের মাছি’ কিংবা ‘বসন্তের কোকিল’ উপমাগুলো বর্শার ফলার মত কান ঘেঁষে তীব্র বেগে ছুটে যায়। আমি পাত্তা দেই না। 

কিন্তু আজ হাসপাতালে না গিয়ে উপায় নেই। সকাল এগারোটা তিরিশে আমাদের ফার্মের মিটিং চলছিল। আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন অ্যাপার্টমেন্টের নির্মাণ আরম্ভ হবে। আর্কিটেক্ট, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কন্ট্রাকটর এদের সবাইকে একত্র করা হয়েছে। শেষবারের মত কাজের ক্রমগুলো এক সুতোয় গাঁথা কি-না তার যাচাই চলছে। টেবিলের ওপর গাদাগাদা নকশার স্তূপ। আমি যখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাইপলাইনের একটা নাজুক মোচড়ে লাল কালির গোল্লা বসাচ্ছি, ঠিক সে সময় নীলার ফোন এলো। ওকে যত দ্রুত সম্ভব অফিস থেকে ওঠাতে হবে। তারপর পান্থপথের কোন একটা হাসপাতালে যাওয়া লাগবে। সব কথা ফোনে বলা যাবে না। আমি যেন হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে আসি। 

নীলার ফোন পেয়ে মনে মনে নিভে গেলাম। ঘণ্টাখানেক পর মধ্যাহ্ন বিরতি। ধানমন্ডি সাতাশ নম্বরে একটা নতুন বুফে রেস্টুরেন্ট খুলেছে। কথা ছিল সামিয়ার সঙ্গে সেখানে দেখা করব। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখন সম্পূর্ণ তিরোহিত। আমি মিটিং রুম থেকে বের হয়ে সামিয়াকে ফোন করলাম। ওর ফোন বন্ধ দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি জানি সামিয়া ঘড়ি ধরে ঠিক বারোটা পঁয়তাল্লিশে রেস্টুরেন্টে যাবে। আমার জন্য প্রয়োজন হলে এক-দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করবে। 

সামিয়ার স্কুল আমাদের অফিস থেকে সাত-আট মিনিটের হাঁটা পথ। ওদের উপবৃত্তাকার নতুন ভবনটা আমাদেরই নির্মাণ করা। ভবনের উদ্বোধনী দিনে আমি অগ্নিনিরাপত্তা আর তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ওপর পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপন করেছিলাম। আমার রসকষহীন বক্তব্যের পর গানের টিচার সামিয়া আহমেদ গেয়েছিল অতুলপ্রসাদের গান, ‘আজ আমার শূন্য ঘরে আসিল সুন্দর, ওগো অনেক দিনের পর।’ আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ওর গান শুনেছিলাম। সেই মুগ্ধতা ডালপালা মেলে আজ আকাশস্পর্শী। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url