নন্দিতার অন্য আকাশ
একটুখানি পড়ুন
বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। দশ মিনিট হাঁটলেই ক্লাসে পৌঁছতে পারে নন্দিতা। প্রতিদিনের চেয়ে আজ সে তিরিশ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হয়েছে। হাতে প্রচুর সময় আছে ভেবে আস্তে-আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে গিয়ে দাঁড়ায় সে। এ সময়ে বন্ধুদের অনেকে গেটে থাকলেও আজ কাউকেই দেখতে পেল না নন্দিতা। গেটে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করে বার-বার ঘড়ি দেখে সে।
একজন অপরিচিত ভদ্রলোককে গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় নন্দিতা। হয়ত কারো জন্যে অপেক্ষা করছে সে। লোকটি দেখতে বেশ। গায়ের রঙ কিছুটা তামাটে। ঘন কালো চুল মাথায়। পঁয়ত্রিশের উর্ধ্বে ভদ্রলোকের বয়স হবে—আন্দাজ করা যায়। পরনে প্যান্ট-শার্ট। পায়ে কালো রঙের জুতো। হাতে সিলভার কালারের ঘড়ি। রোদ লেগে চকচক করছে তার কপালের ঘাম। টিস্যুপেপার দিয়ে ঘাম মোছে সে। হঠাৎ চোখে চোখ পড়লে পায়ে-পায়ে নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়ায় লোকটি। কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় সে। এতে নন্দিতা কিছুটা অবাক ও বিরক্ত হয়। আগ বাড়িয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করে, কিছু বলবেন?
আমি কি আপনার সঙ্গে দু-একটি কথা বলতে পারি?
কথা বলছেন তো আপনি! কী কথা বলতে চান, সেটা বলুন।
চলুন না, ওখানটায় গিয়ে বসি।
নন্দিতা অবাক হয়ে বলে, কী বলছেন আপনি! আপনার সঙ্গে লনে গিয়ে বসব কেন? আমি আপনাকে চিনি না, জানি না। হুট করে আপনার সঙ্গে লনে গিয়ে বসতে যাবো কেন?
নন্দিতার কথা শুনে ভদ্রলোক আমতা-আমতা করতে থাকে। বলে, নাÑমানে—এই আর-কি!
Ñ আমি আপনাকে চিনি না, জানি না। তো হঠাৎ করে আপনার সঙ্গে লনে গিয়ে বসব, চা খাবো, আড্ডা দেবো। এমনটা তো হয় না। হতে পারে না।
তা ঠিক। তবে আমি আপনাকে কিছুটা হলেও জানি।
জানেন মানে? আপনি চেনেন আমাকে?
চিনি না ঠিকই, তবে কিছুটা হলেও জানি।
অবাক হয় নন্দিতা। বলে, আমার সম্পর্কে কী জানেন আপনি?
এতক্ষণে লোকটি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বলল, আপনার আপা-দুলাভাই কিছু বলেননি আপনাকে?
বলেছেন তো...
লোকটি হঠাৎ আগ্রহী হয়ে ওঠে—কী বলেছেন?
বলেছেন ক্লাস শেষে যেন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাই। কেন বলুন তো?
না ওসব নয়। আর কোনো কথা বলেননি?
না তো!
হতাশ হয় লোকটি।
ওঃ। সরি আপনাকে বিরক্ত করলাম।
লোকটি আর দাঁড়াল না। দ্রুত হাঁটতে লাগল বড় রাস্তার দিকে।