বিচ্ছু মেয়েটা


বিচ্ছু মেয়েটা
ডা. ফাহমিদা মাহবুবা
মূল্য : ২৬০ টাকা


একটুখানি পড়ুন :  

আসগর সাহেব আদর করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন তৃষ্ণা। মেয়ের মুখ থেকে চোখ সরাতে পারতেন না বলে। ওই ছোট্ট মুখটাতে কী যে মায়া! দেখে-দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটত না তার। 

এখন সেই আসগর সাহেবই রাগ করে মেয়েকে ডাকেন ‘বিতৃষ্ণা’ বলে। এত হাঁড়-জ্বালানি মেয়ে হয়েছে, মাথাভর্তি খালি দুষ্টু বুদ্ধি! 

এই তো সেদিন ভার্সিটি থেকে ফিরছিল। ফেরার পথে রাস্তার এক জায়গায় ভাঙা। অনেকদিন থেকে ওই জায়গাটা ভাঙা। ভাঙা বলতে বিশাল সাইজের একটা গর্ত। খুব সাবধানে কেটেকুটে পার না হলে গাড়ি ফেঁসে যাবে। সিটি কর্পোরেশনের লোক কী ঘোড়ার ডিম করে, জানি না। রাস্তা ভাঙা ঠিক করবে না? এটা কাদের দায়িত্ব? আজব এক দেশে বাস করছি!

মনে-মনে গজগজ করছেন আসগর সাহেব। 

পরে কথা নাই-বার্তা নাই, থানা থেকে এসআই ইখলাস সাহেবের ফোন! 

: আসসালামু আলাইকুম, আসগর সাহেব বলছেন?

: জি বলছি। আপনি কে?

: আমি থানা থেকে এসআই ইখলাস বলছি। আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে যে। 

: কেন? কী হয়েছে?

: আসুন বলছি। বলেই টকাশ করে ফোনটা রেখে দিলেন। 

হদতন্ত হয়ে থানায় পৌঁছে দেখেন গুণধর মেয়ে থানায় বসা!

কাহিনী হলোÑভাঙা রাস্তার বড় গর্তটায় তৃষ্ণার গাড়ি ফেঁসে গিয়েছিল। পরে ও গাড়ি হতে নেমে পাশের মার্কেট থেকে মাটি কাটার ঝুড়ি ও কোঁদাল জোগাড় করে রাস্তার পাশের নিচু জায়গা থেকে মাটি কেটে ড্রাইভারকে দিয়ে গর্তটা মেরামত করে। এখন আর গাড়ি ফাঁসবে না কারো। 

আসগর সাহেব খুশি হয়ে বললেন, ভালো কাজই তো করেছে। থানায় নিয়ে এসেছেন কেন?

ইখলাস সাহেব ভ্রু কুঁচকালেন। বেচারার মনে হয় ভ্রু কুঁচকানোর বদ অভ্যাস আছে। একটা কথা বলে আর ভ্রু কুঁচকায়। ভালো হোক, আর মন্দ কথা হোক। 

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি মনে হয় দেশে কোনো আইন নাই? কোন সিস্টেম নাই?

আসগর সাহেব মনে-মনে ঠিকই বললেন, আছে নাকি? কিন্তু মুখে বললেন, তা তো আছেই। কিন্তু এই সাধারণ ঘটনার জন্য থানায় কেন?

এবার এসআই সাহেব একটু রেগে গেলেন মনে হচ্ছে। রেগে গেলে তার ভ্রু কুঁচকানোর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। 

আপনার কাছে এটা সাধারণ ঘটনা মনে হচ্ছে? এটা একটা বড় ঘটনা। এই রাস্তার নামে কমপ্লেইন পাঠানো হয়েছে। রাস্তা মেরামত বাবদ বড় অংকের একটা টাকাও পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সপ্তাহেই এই রাস্তার জরিপ হবে। জরিপে এসে যদি দেখে গর্ত নাই, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলুন তো?

এতক্ষণে আসগর সাহেব বুঝতে পারলেন সমস্যাটা কোথায়। বড় অংকের টাকা পাস, সবার পকেটে পৌঁছার আগেই তৃষ্ণা সেটা ৩/৪ ঝুড়ি মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে! 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url