শুধু সাহিত্য নয়, সব ভাবনা প্রকাশের মাধ্যম জলছবি

জলছবি বাতায়ন ব্লগ। শুধু সাহিত্য নয়, সব ভাবনার প্রকাশ ঘটতে পারে এই মাধ্যমে। তবে সেটা ফেসবুকের মতো সংক্ষিপ্ত বা অসম্পূর্ণ নয়। ভাবনার গভীরে যেতে হবে লেখককে। প্রতিটি লেখা হতে হবে সুচিন্তিত, সুবিন্যস্ত এবং যৌক্তিক। ব্লগের এটাই নিয়ম। ফেসবুকের কারণে অনেকে এই নিয়মটা জানেন না, যারা জানেন তারাও ভুলে বসে আছেন!
যারা লেখালিখি ছেড়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ব্লগ চর্চা শুরু পর তারা আবার ব্লগে লেখালিখি শুরু করেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন নতুনরাও। জমজমাট ব্লগে নতুনরা সিনিয়রদের যথেষ্ট সম্মান করতে দেখেছি, সিনিয়ররাও নতুনদের উৎসাহ দিয়ে ভুল শুধরে দিতেন-পরামর্শ দিতেন। মোট কথা বøগ চর্চার ফলে একটা সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছিল নতুন লেখক ও পুরোনো লেখকদের মধ্যে। বøগে নতুন লিখিয়েরা চাইতেন তাদের ভুলগুলো যেন কমেন্টস বক্সেই শুধরে দেয়া হয়। তখনও নতুনদের মধ্যে মিথ্যে আত্মসম্মানবোধ ছিল না, যেটা হয়েছে ফেসবুক চালু হওয়ার পর। ফলে নতুনরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি।

শুধু কি সিনিয়ররা নতুনদের ভুল শুধতে দিতেন? না, নতুনরাও সিনিয়রদের ভুল ধরতেন এবং কমেন্টস বক্সে সেগুলো নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতেন। সিনিয়রাও কিছু মনে করতেন না। কারণ এটাই ছিল ব্লগের রীতি।
জলছবি বাতায়নের শুরু ২০১১ সালে, যখন প্রথম আলো বøগ বেশ জমজমাট। আমিও প্রথম আলো ব্লগের নিয়মিত ও খুব সরব বøগার ছিলাম। প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে পুরস্কার হিসেবে একটি বাংলা অভিধান পেয়েছিলাম, লেখক আনিসুল হকের হাত থেকে সেই পুরস্কারটি গ্রহণ করার স্মৃতি আমার মানসপটে এখনও জ্বলজ্বল করছে। সে সময় জলছবি বাতায়নে যারা লিখতেন পরবর্তীতে তাদের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব ঘনিষ্ঠতা পায় এবং এখনও সে সম্পর্ক এতটুকু ম্লান হয়নি। তবে দুঃখের বিষয়, ফেসবুকে দীর্ঘদিন লেখালিখি করেও ব্লগের মতো বন্ধুত্ব কারো সাথেই তেমন করে তৈরি হয়নি। কারণ ফেসবুকে নতুন বা সিনিয়রদের লেখায় মন্তব্য করতে খুব ভাবতে হয়, নিজেকে উজাড় করে কোনো কথা বলা যায় না। আর লেখকরাও সেখানে এই ধারা পছন্দ করেন না; ফলে সম্পর্কের মধ্যে একটা দূরত্ব শুরু থেকেই থাকে, আর পূর্ণতা লাভ করে না।

জলছবি বাতায়ন থেকে মোট ১০টি প্রকাশনা অর্থাৎ প্রিন্ট ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছিল। যেহেতু জলছবি বাতায়নের নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই বা আমার নিজের পক্ষে প্রকাশনার টাকা একার বহন করা সম্ভব ছিল না, সে কারণে আমরা যারা নিয়মিত লেখালিখি করতাম, তারাই খরচটা বহন করতাম। আমরা মনে করতাম, দশের লাঠি, একের বোঝা।
তারপরও জলছবি বাতায়ন বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ফেসবুকের আগ্রাসী ভূমিকা এবং লেখকদের লাইক-কমেন্টসের প্রতি আসক্তি। তাহলে কেন আবার জলছবি বাতায়নের পুনঃযাত্রা? নিজেকে বুঝিয়েছি আমি, সঠিক পথে একলা চলায়ও সুখ আছে, আছে পরিতৃপ্তি।
জলছবি বাতায়ন চালু হওয়ার পর আমি পরিচিত লেখক ও বন্ধুদের জলছবিতে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েও খুব একটা সাড়া পাইনি। দুঃখ নেই, আমি জানি কেউ না কেউ আমার সাড়া দেবেন এবং এই বøগটি আগের মতো জমজমাট হবে, লেখালিখির সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি হবে জলছবি বাতায়নে।
শুভব্লগিং। ভালো থাকুন সবাই।

কবি প্রকাশক- জলছবি

সকল পোস্ট : প্রকাশক- জলছবি

৪ thoughts on “শুধু সাহিত্য নয়, সব ভাবনা প্রকাশের মাধ্যম জলছবি

মন্তব্য করুন